মানুষ দৈনন্দিন বিভিন্ন সেবা পাওয়ার জন্য চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাব খুলে থাকে। এ হিসাব খোলার পর গ্রাহক তার হিসাবে কিছু সেবা চালুর জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন। সেবাগুলো হলো— SMS সার্ভিস, Mobile অ্যাপস, Internet banking, Debit কার্ড, চেক বই কার্যকর করা ইত্যাদি। ব্যাংক কর্তৃক এসব সেবা কীভাবে কার্যকর করা হয় তা নিচে আলোচনা করা হলো—
ক. SMS সার্ভিস কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing SMS service)
SMS সার্ভিসটি হচ্ছে ব্যাংকে গ্রাহকের হিসাবে কত টাকা জমা হলো বা কত টাকা উত্তোলন করা হলো তার বিবরণ SMS-এর মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া। গ্রাহকের হিসাবে যদি কোনো চেক জমা করা হয় তাহলেও এ সার্ভিস সাথে সাথে জানিয়ে দেয়। যেকোনো সময়ে এ সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যাংক ব্যালেন্স জানা যায়। এজন্য হিসাবধারীকে বার্ষিক একটি ফি দিতে হয়। একজন গ্রাহকের হিসাবে কীভাবে এ সার্ভিস চালু হবে এর ধাপসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো—
প্রথম ধাপ (First step): হিসাবধারীকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফরম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হয় ।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফরমটি ব্যাংক তাদের SMS Banking Division / Alternative Delivery Channel-এ প্রেরণ করে।
তৃতীয় ধাপ (Third step ) : Alternative Delivery Channel / SMS Banking Division হিসাবধারী কর্তৃক প্রদত্ত রেজিষ্টার্ড মোবাইল নম্বরটি তাদের সফটওয়্যারে Input দেয়। এর মাধ্যমে গ্রাহক সবসময় সংশ্লিষ্ট মোবাইল নম্বরে হিসাবের লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি SMS-এর মাধ্যমে জানতে পারবে।
খ. Mobile অ্যাপস কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing mobile apps )
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে মানুষ সব ক্ষেত্রে আধুনিকতার সংস্পর্শে এসেছে। ব্যাংকিং জগৎও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই মানুষ আজ ঘরে বসেই তার যাবতীয় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। ঘরে বসে ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন: দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করা, তহবিল স্থানান্তর, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের বিল প্রদান, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল সহ যাবতীয় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা, হিসাবের ব্যালেন্স দেখা, হিসাবের টোটাল স্টেটমেন্ট প্রদর্শনসহ যাবতীয় ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করার জন্য হিসাবধারীকে একটি Mobile অ্যাপস চালু করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে থাকে। এজন্য হিসাবধারীকে বার্ষিক একটি ফি দিতে হয়। এই Mobile অ্যাপসটি চালু করতে ব্যাংককে নিচের ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হয়—
প্রথম ধাপ (First step) : হিসাবধারীকে ব্যাংকের নির্ধারিত ফর্ম পূরণের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
দ্বিতীয় ধাপ (Second step) : আবেদনকারীকে ফর্মটি স্বাক্ষর করে ব্যাংকে জমা দিতে হয়।
তৃতীয় ধাপ (Third step) : স্বাক্ষরকৃত আবেদন ফর্মটি ব্যাংক তাদের Mobile Banking Division/Alternative Delivery Channel এ প্রেরণ করে ।
চতুর্থ ধাপ (Fourth step) : Alternative Delivery Channel / Mobile Banking Division হিসাবধারী কর্তৃক প্রদত্ত রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরটি তাদের সফটওয়্যারে Input দেয় ।
পঞ্চম ধাপ (Fifth step) : এ পর্যায়ে কাস্টমারের মোবাইলে কাঙ্ক্ষিত অ্যাপসটি (যেমন: বিকাশ, নগদ, এমক্যাশ, রকেট, ইউক্যাশ ইত্যাদি) চালুর জন্য ব্যাংক হিসাবধারীর রেজিস্টার্ড মোবাইলে একটি লিংক দিবেন। কাস্টমার তার মোবাইলে উক্ত অ্যাপসটি চালু করে নিবেন।
গ. Internet ব্যাংকিং কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing internet banking)
বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ সর্বক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও উন্নতির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। আজ আমরা সর্বক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা পাচ্ছি। তাই ব্যাংকিং সেবার ক্ষেত্রেও আমরা এই ডিজিটাল সেবাসমূহ পাচ্ছি। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে Internet ব্যাংকিং। ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করাকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং বলে। এর ফলে আমরা পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে নিজ ব্যাংকের সাথে আন্তঃলেনদেন সম্পন্ন করতে পারি। অর্থাৎ Fund ট্রান্সফার, হিসাব নিরীক্ষা, মানুষের পাওনা পরিশোধ, সরকারি বিভিন্ন উপযোগ সেবা গ্রহণের বিল পরিশোধ, শেয়ার ও বিনিয়োগ মিশ্রণ পরীক্ষাকরণ, ব্যালেন্স অনুসন্ধান ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার লেনদেন করতে পারি। কিন্তু ব্যাংকের এসব আধুনিক সেবা নিতে হলে আমাদেরকে কিছু কাজ সম্পন্ন করতে হবে। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
Internet Banking সেবাটি পেতে হলে সর্বপ্রথম মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপস চালু করতে হবে। এই সেবাটি চালুর ক্ষেত্রে Mobile অ্যাপস সার্ভিসটি চালুর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। তবে এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কাস্টমারকে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে—
• কাস্টমারের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরটি যে মোবাইলে বা যে ট্যাবে থাকবে সেটিতে অবশ্যই এন্টিভাইরাসের লেটেস্ট ভার্সন থাকতে হবে।
• কাস্টমারের মোবাইল বা ট্যাবে কাঙ্ক্ষিত মোবাইল অ্যাপসটি চালু করতে হবে।
• কাস্টমারের নির্ধারিত User ID ও Password দিয়ে Sign in করতে হবে।
• Sign in শেষে একটি OTP (One Time Password) নম্বর আসবে। এই OTP নম্বরটি ভার্চুয়াল কিবোর্ড ব্যবহার করে প্রদান করতে হবে।
• OTP নম্বরটি সঠিকভাবে Input দেওয়া হলে কাস্টমারের হিসাবটি চালু হবে ।
• এখন কাস্টমার তার যাবতীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবে।
• কাজ শেষে Sign out-এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস থেকে বের হতে হবে।
এভাবে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে Internet Banking সেবাটি কার্যকর করা হয়।
ঘ. Debit কার্ড কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of exceuting debit card)
ডেবিট কার্ড হলো ব্যাংক কর্তৃক আমানতকারীকে প্রদত্ত চুম্বকভিত্তিক সাংকেতিক নম্বরযুক্ত বিশেষ এক ধরনের প্লাস্টিকের এটিএম কার্ড। এ কার্ডটি গ্রাহকের চলতি বা সঞ্চয়ী হিসাবের সাথে সংযুক্ত থাকে। পরবর্তী সময়ে গ্রাহক এ কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করলে গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। এ কার্ডের অপর নাম নগদ কার্ড বা সম্পদ কার্ড।
ডেবিট কার্ড সেবার উদ্দেশ্য হচ্ছে আয় বাড়ানো, ব্যয় কমানো ও গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিতকরণ। বর্তমানে হিসাব খোলার সাথে সাথে অধিকাংশ ব্যাংক তাদের গ্রাহককে ডেবিট কার্ড প্রদান করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাব খোলার সময় গ্রাহক যেসব ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধাসমূহ গ্রহণ করতে চাচ্ছেন সেজন্য হিসাব খোলার ফরমে টিক দিতে হয়। হিসাবধারী ডেবিট কার্ডটি গ্রহণ করতে চাইলে ডেবিট কার্ড অপশনে টিক দিবে। ব্যাংক হিসাব খোলার সাথে সাথে ডেবিট কার্ড প্রদান করা হয় না। অল্প কিছুদিন যেমন: ১০ বা ১৫ দিন সময় নিবে। কিন্তু কিছু ব্যাংক হিসাব খোলার সময় উক্ত সেবাটি চালুর অপশন রাখে না। ফলে ঐসব ব্যাংকের ক্ষেত্রে হিসাবধারীকে ব্যাংকে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। উক্ত আবেদন ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে ব্যাংক হিসাবধারীর জন্য একটি ডেবিট কার্ড ইস্যু করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক একটি গোপন পিন নম্বর প্রদান করে। হিসাবধারী নিজে নতুন Password সেট করবেন। ডেবিট কার্ড ব্যবহারকারীকে এ সেবা পেতে বার্ষিক চার্জ প্রদান করতে হয়। ব্যাংক বিশেষে এ খরচ কম-বেশি হয়। এভাবেই ব্যাংক ডেবিট কার্ড কার্যকর করে।
ঙ. চেক বই কার্যকর করার প্রক্রিয়া (Process of executing cheque book)
চেক বই হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের জন্য ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীর লিখিত নির্দেশনামা। অর্থ উত্তোলন সহজ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে চেকের প্রচলন হয়েছে। আইন অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ তাকে চাহিবামাত্র প্রদানে বাধ্য থাকে। ব্যাংকে হিসাব খোলার সাথে সাথে গ্রাহককে লেনদেনের জন্য চেক বই প্রদান ও তা কার্যকর করে দিতে হয়। এক্ষেত্রে গ্রাহককে কিছু কাজ করতে হয়। নিচে তা আলোচনা করা হলো-
• হিসাবধারীকে চেকের জন্য রিকুইজিশন দিতে হয়। চেক রিকুইজিশন হলো চেক প্রাপ্তির জন্য ব্যাংকের নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করা।
• আবেদন ফরমের সাথে কাস্টমারকে ব্যাংক হিসাব খোলার পর হিসাবধারীর বর্তমান ঠিকানায় হিসাবের
• নম্বরসহ যে ধন্যবাদ জ্ঞাপনপত্র পাঠায় তা সংযুক্ত করতে হয়। ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা উক্ত আবেদন ফরম ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস বুঝে নেয়।
• ব্যাংক আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও হিসাব নম্বর চেক করে অথরাইজ করবে এবং আবেদন ফরমটি হেড অফিসে পাঠাবে।
• হেড অফিস ৩য় পক্ষের মাধ্যমে চেক বই প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট ব্রাঞ্চে পাঠাবে 1
• ব্রাঞ্চ উক্ত চেক বইয়ের পাতার সিরিয়ালটি সফটওয়্যারে হিসাবধারীর হিসাবে প্রবেশ করাবে।
• ব্যাংকে রক্ষিত রেজিষ্টার বইয়ে হিসাবের নাম, হিসাব নম্বর, চেকের ক্রমিক নম্বর, চেকের পাতার সংখ্যা ইত্যাদি লিখে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসাবধারীর স্বাক্ষর গ্রহণ করে চেক বইটি হিসাবধারীকে প্রদান করবে।
• চেকের সিরিয়ালটি একজন ব্যাংক কর্মকর্তা Input দিবে এবং অন্যজন তা অথরাইজ করবে। এভাবে চেক বইটি কার্যকর হবে।
Read more